“পরগনাহী দৌলতপুর সিনিয়র মাদ্রাসার অতীত ও বর্তমান”
কাজী রমিজ উদ্দিন
বড়লেখা উপজেলার প্রান্তিক জনপদ দৌলতপুর অঞ্চলে একটি দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেওয়ায় ১৯৪৮ খ্রীঃ দিকে বিষয়টি তাওহীদি জনতার মনে বেশ আগ্রহ উদ্দীপনা সঞ্চার করে। ঠিক তখনই দৌলতপুর নিবাসী জনাব মোহাম্মদ কলিম এর সুযোগ্য সন্তান মাওলানা মোঃ মছদ্দর আলী (আমাদের বংশীয় দাদা) ভারতের সাহরানপুর ও দেওবন্দ মাদ্রাসা থেকে শিক্ষা লাভ করে দেশে ফিরেন। মাওলানা সাহেব দ্বীন ইসলামের সুমহান শিক্ষা ছড়িয়ে দেওয়ার মহান ব্রত কে পরমজ্ঞান করে ১৯৪৮ সালে মাদ্রাসার গুড়াপত্তন করেন।
মহান এই শিক্ষায়তনের শুভ সুচনার জন্য কোন ভবন বা কাঠামো নির্মাণ করা ছিলো কল্পনাতীত। তাই তৎকালিন স্থানীয় দৌলতপুর বাজার মসজিদে গুটিকয়েক ছাত্র নিয়ে সম্পূর্ণ অনাড়ম্বর পরিবেশে পাঠদান শুরু হয়। তখনো মাদ্রাসার কোন অর্থনৈতিক কাঠামো ছিল না বিধায় সম্পূর্ন বিনা বেতনে মাওলানা মোঃ মছদ্দর আলী সাহেবের নিবেদিত স্বেচ্ছাশ্রম আর অধম্য কর্ম নিষ্টায় ইলমে ওহীর পাঠদান চলতে থাকে। ক্রমেই জ্ঞান পিপাসু শিক্ষার্থীদের সংখ্যা বাড়তে থাকলে মাদ্রাসার একটি কাঠামো তৈরী আবশ্যক হয়ে পড়ে। এলাকাবাসীর অকুন্ঠ সমর্থন ও সহযোগীতায় দৌলতপুর বাজার সংলগ্ন বর্তমান ঈদগাহের পশ্চিম-উত্তর কোণে বাঁশ-বেত দ্বারা একটি কাঁচা ঘর নির্মাণ করে শুরু হয় নতুন পদযাত্রা। এ যাত্রায় মাওলানা মছদ্দর আলীর সাথে সহকারী শিক্ষক হিসেবে যুক্ত হন দ্বীন ইসলামের আরও একজন খাদেম, কানলী নিবাসী ক্বারী ইব্রাহীম আলী সাহেব। তাঁদের নিরলস সাধনায় প্রতিষ্ঠানের উত্তরোত্তর অগ্রগতির ফলে ধীরে ধীরে প্রচুর পরিমাণ জ্ঞান পিপাসু শিক্ষার্থীর সমাগম ঘটে। ফলে প্রতিষ্ঠানটির একটি স্থায়ী অবকাঠামো নির্মাণের প্রয়াজনীয়তা অতীব জরুরী হয়ে পড়ে। ঐ সময় এলাকার কতিপয় ব্যক্তিবর্গ ভারতের ডিগবই তে কর্মরত ছিলেন। মাওলানা মোঃ মছদ্দর আলী সাহেব ডিগবইতে কর্মরত ব্যক্তিবর্গের কাছে মাদ্রাসার নতুন ভবন নির্মাণের জন্য আর্থিক সহযোগিতা চেয়ে পত্র প্রেরণ করেন। তাঁদের কাছ থেকে সহযোগিতার আশা পেয়ে মাওলানা মোঃ মছদ্দর আলী সাহেব এলাকাবাসীকে নিয়ে মতবিনিময় করে, স্থানীয়দের কাছেও সহযোগিতা চান। ডিগবইতে কর্মরত ব্যক্তিদের প্রেরিত অর্থের সাথে দৌলতপুর, ইটাউরী এবং আশপাশ এলাকার মানুষের দানকৃত টাকায় একটি আর্থিক তহবিল গঠিত হয়। কিন্তু এই তহবিলের সমুদয় অর্থের দ্বারাও নতুন ভবন তৈরীর জন্য প্রয়োজনীয় জমি কেনা আদৌ সম্ভব ছিলো না। মাওলানা মোঃ মছদ্দর আলী সাহেবের বাপচাচার যৌত সম্পত্তি থেকে ২১ শতক ভূমি মাদ্রাসার জন্য ওয়াকফ করে দেন।
তৎকালীন সময়ে অত্র অঞ্চলে ইটের ভাটা ছিলো অপ্রতুল। তাই নির্মাণ কাজের জন্য মাওলানা মোঃ মছদ্দর আলী সাহেবের তত্বাবধানে ও দৌলতপুর (মাঝরবাড়ী) নিবাসী জনাব হাজী খুরশীদ আলীর প্রচেষ্টায় একটি ইটের ভাটা তৈরী করা হয়। এ সময় মাওলানা মোঃ মছদ্দর আলী সাহেব এর সুযোগ্য সহচর জনাব ইব্রাহিম আলী সাহেব মাদ্রাসা থেকে অব্যাহতি গ্রহণ করে অন্যত্র চলে যান। ১লা জানুয়ারী ১৯৫০ সালে ঐ ইটাভাটার ইট দিয়ে উপরে উল্লেখিত ওয়াকফকৃত জমিতে দালান নির্মিত হলে মাদ্রাসার আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়। নতুন ভবনের পাঠদান শুরুর প্রাক্ষালে প্রতিষ্ঠাতা ও অধ্যক্ষ মাওলানা মোঃ মছদ্দর আলী সাহেব তৎকালীন ৯টি মৌজার জনসাধারণকে নিয়ে এক পরামর্শ সভার আয়োজন করেন। উক্ত সভায় মাদ্রাসার নির্মাণ কাজের সহযোগিতার জন্য ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানানোর পাশাপাশি সকলের সার্বিক সহযোগিতা কামনা করেন। উক্ত সভাতেই “পরগনাহী দৌলতপুর মাদ্রাসা” নামটি সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়। উল্লেখ্য যে, এর আগে প্রতিষ্ঠানটির নাম ছিলো দৌলতপুর ইসলামীয়া মাদ্রাসা।
মাদ্রাসার শিক্ষাকার্যক্রম ও সার্বিক বিষয়ের তদারকির জন্য ইটাউরী (পূর্বগ্রাম) নিবাসী জনাব মুফাজ্জিল আলী কে সভাপতি ও প্রতিষ্ঠাতা মাওলানা মোঃ মছদ্দর আলীকে সেক্রেটারী করে একটি কমিটি গঠন করা হয়। ঐ সময় প্রতিষ্ঠানটি এলাকার কিছু সংখ্যক বিত্তশালী ব্যক্তিবর্গের সুনজরে আসে। এ সকল বিত্তবান ও দানশীল ব্যক্তিবর্গের সহযোগিতায় মাদ্রাসার প্রভূত উন্নতি সাধিত হয়। এদের মধ্যে ইটাউরী নিবাসী জনাব হাজী ইদ্রিছ আলী ও কালাইউরা গ্রামের জনাব রাশেদ খান বিশেষভাবে উল্লেখ্যযোগ্য। উল্লেখিত জনাব হাজী ইদ্রিস আলীর নিজস্ব অর্থায়নে নতুন ভবনের দেওয়াল প্লাস্টার ও টিন দ্বারা বারান্দা নির্মাণ করে দেন। জনাব রাশেদ খান তৈরী করে দেন নতুন ভবনের ডেক্স-বেঞ্চ।
১৯৫০ খ্রীঃ সনে নতুন ভবনের উদ্বোধনের সাথে সাথে শিক্ষা কার্যক্রমের নতুন যাত্রা দিতে আউয়াল প্রথম শ্রেণী থেকে পঞ্চম শ্রেণীতে উন্নিত করা হয়। শিক্ষার্থীদের ক্রমবর্ধমান চাহিদা ও পাঠ্যক্রমের গতিশীলতা আনয়ন করতে কিছু সংখ্যক নতুন শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়। এ সময়ে নিয়োগকৃত শিক্ষকগন হচ্ছে কানলী নিবাসী মৌলভী আব্দুর রাজ্জাক, কালাইউরা নিবাসী ক্বারী আব্দুল মজিদ ও ভারতীয় বংশোদ্ভুত ইটাউরী এলাকার বসবাসকারী জনৈক মৌলভী প্রমুখ।
শিক্ষকদের যুক্তিনির্ভর, বুদ্ধিদীপ্ত পাঠদান ও নিবিড় তত্বাবধানের ফলে দিন দিন মাদ্রাসার সুনাম ছড়াতে থাকে। ফলে দুর-দুরান্ত থেকে শিক্ষার্থীরা আসতে শুরু করে। এই সময়ের অত্র এলাকার উল্লেখযোগ্য ছাত্ররা হচ্চেন একেএম.এ শাকুর (দৌলতপুর) কর্মজীবনে অধ্যক্ষ ও ৫ টি ইউনিয়নের নিকাহ রেজিষ্ট্রার ছিলেন। মাওলানা কাজী আফসার উদ্দিন (দৌলতপুর) কর্মজীবনে উত্তর শাহবাজপুর ইউনিয়নের নিকাহ রেজিষ্ট্রার ছিলেন। মাওলানা সাখাওয়াত আলী (পুকুয়া) কর্মজীবনে কালাইউরা জামে মসজিদের ৫৩ বছরের খতিব, মাওলানা আব্দুল মতিন (আমকোনা) কর্মজীবনে শিক্ষক প্রমুখ।
প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ মাওলানা মোঃ মছদ্দর আলী সাহেব ৩১শে ডিসেম্বর ১৯৬৬ খ্রীঃ সালে অধ্যক্ষের পদ থেকে স্বেচ্ছায় অব্যাহতি গ্রহন করলে জকিগঞ্জের মাওলানা আব্দুল মালিক (বারঠাকুরী) সাহেব দায়িত্ব গ্রহণ করে ৩১শে ডিসেম্বর ১৯৭৯ খ্রীঃ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করে মাওলানা মোঃ ছয়ীদুল হক (জকিগঞ্জী) এর কাছে ভারপ্রাপ্ত দায়িত্ব দিয়ে অন্যত্র চলে যান। তিনি ১৯৯৯ সালে ২৯শে ডিসেম্বর নিজবাড়ী (বারঠাকুরী) ইন্তেকাল করেন। উল্লেখ্য যে, মাওলানা মোঃ মছদ্দর আলী সাহেব অধ্যক্ষের পদ থেকে অব্যাহতি গ্রহন করার পরও ১লা সেপ্টেম্বর ১৯৮৪ খ্রীঃ পর্যন্ত শিক্ষাদান অব্যাহত রাখেন। সময়ের পরবর্তনের সাথে সাথে মাদ্রাসাকে দাখিল পর্যন্ত উন্নিত করার প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। এই নিমিত্তে মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটি, শিক্ষক ও এলাকাবাসী সম্মত হন। ফলে সরকারী করনের অনুমোদনের জন্য কামিল পাশ সনদধারী ১ জন অধ্যক্ষের প্রয়োজন হয়।
তাই ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মাওলানা মোঃ ছয়ীদুল হক (জকিগঞ্জী) কাছ থেকে বিধি মোতাবেক ১৫ই মে ১৯৭২ খ্রীঃ সালে সিলেট জেলার কানাইঘাট উপজেলাধীন বীরদল নিবাসী জনাব মাওলানা ফয়জুর রহমান চৌধুরী (বীরদলী হুজুর) অধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত হন। সরকারী বিধি অনুযায়ী দাখিল অনুমোধনের জন্য মাদ্রাসায় আরো কিছু জমির প্রয়োজন দেখা দিলে এলাকার কিছু দানশীল ব্যক্তিবর্গ এগিয়ে আসেন এবং প্রয়োজনীয় পরিমান জমি মাদ্রাসার নামে ওয়াকফ করে দেন।
তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য দৌলতপুর নিবাসী জনাব মোঃ মছদ্দর আলী গং, জনাব মোঃ হারিছ আলী ও ইছুব আলী, জনাবা মস্তুরা বিবি গং, কালা মিয়া গং সহ আরো অনেকে দান করেন।
অধ্যক্ষ মাওলানা ফয়জুর রহমান চৌধুরী নিয়োগের ফলে ১৯৭২ খ্রীঃ সালে ০১লা জানুয়ারী দাখিল পর্যন্ত সরকারী অনুমোদন লাভ করে। পরবর্তীতে ১৯৭৮ খ্রীঃ ০১লা জুলাই আলিম পর্যন্ত অনুমোদ লাভ করে এবং ১৯৮৪ খ্রীঃ ১লা জুন মাদ্রাসাটি এমপিও ভূক্ত হয়। ১৯৮৮ খ্রীঃ সালের ৬ই এপ্রিল তারিখে মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা (আমাদের বংশির দাদা) মাওলানা মোঃ মছদ্দর আলী ইন্তেকাল করেন। অধ্যক্ষ মাওলানা ফয়জুর রহমান চৌধুরী অত্যন্ত নিষ্টার সাথে দায়িত্ব পালন শেষে ১৯৮৪ খ্রীঃ সালের ০১লা জানুয়ারী অবসর গ্রহণ করেন এবং ১৯৮৫ খ্রীঃ সালের ২৩শে ডিসেস্বর নিজ বাড়ী (বীরদল) ইন্তেকাল করেন।
মাদ্রাসার শুরুর দিকের ছাত্র (বংশিয় চাচা) জনাব এ.কে.এম. আব্দুর শাকুর ১৫ই এপ্রিল ১৯৮৪ খ্রীঃ সালে অধ্যক্ষের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। অধ্যক্ষের দায়িত্বের পাশাপাশি বড়লেখা উপজেলার এক সময়কার বর্ণী, দাসের বাজার, নিজ বাহাদুরপুর, দক্ষিণ শাহবাজপুর ও তালিমপুর ইউনিয়নের নিকাহ রেজিষ্ট্রার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
১৯৮৯ খ্রীঃ সালের ০১লা জানুয়ারী অধ্যক্ষ পদ থেকে স্বেচ্ছায় অব্যাহতি নেয়ার পর ও মাদ্রাসার সাথে তাঁর যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়নি। তিনি বিভিন্ন সময়ে মাদ্রাসার একজন অভিভাবক হিসেবে গভার্নিং বডির অন্যতম সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। গত ১৮ই মার্চ ২০২০ খ্রীঃ তারিখে বার্ধক্যজনিত কারনে ৯০ বছর বয়সে তিনি নিজবাড়ীতে ইন্তেকাল করেন।
এছাড়াও উপাধ্যক্ষের দায়িত্ব মাওলানা মোঃ ছয়ীদুল হক (জকিগঞ্জী) পর্যায়ক্রমে ১৯৭০-৭২, ১৯৮৩-৮৪, ১৯৮৯ খ্রীঃ সালে মাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ২০০৪ খ্রীঃ সালের ২৯শে ফেব্রয়ারী মাদ্রাসার উপাধ্যক্ষ পদ থেকে অবসর গ্রহন করেন এবং ২০১৮ খ্রীঃ সালের ১৭ই নভেম্বর নিজ বাড়ী (ভরন সুলতানপুর) গ্রামে ইন্তেকাল করেন।
১৯৮৯ খ্রীঃ সালের ০১লা জুলাই জকিগঞ্জের মাওলানা আব্দুল গফ্ফার সাহেব (সরাসরি আমার শিক্ষক) এই প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষের দায়িত্ব গ্রহণ করে তাঁর অসাধারণ প্রশাসনিক দক্ষতা, পেশাদারিত্বের নৈপুণ্য, দায়িত্ব ও কার্যক্রম, অবকাঠামো তথা সার্বিক বিষয়ের প্রভূত উন্নয়ন সাধিত করেন। প্রাতিষ্ঠানিক রেকর্ড থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায় যে, অধ্যক্ষ আব্দুল গফ্ফার সাহেব দায়িত্ব গ্রহনের সময় মাদ্রাসার তহবিলের অবস্থা ছিলো অত্যন্ত নাজুক। তাঁরই নিপুন ব্যবস্থাপনায় অত্র তহবিল সুদৃড় ভিত্তির উপর সুপ্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। পাবলিক পরীক্ষাগুলোতে পূর্বেকার তুলনায় বেশি সংখ্যক শিক্ষার্থী এবং মানসম্পন্ন ফলাফল আসতে থাকে। মাদ্রাসায় উল্লেখযোগ্য পরিমান নারী শিক্ষার্থীদের সমাগম ঘটে। তৎকালীন দুবাই প্রবাসী দৌলতপুর নিবাসী, আজীবনদাতা সদস্য জনাব হাজী আকবর হোসেন ও আজীবনদাতা সদস্য আব্দুল শহীদের সংগৃহিত অর্থ দ্বারা মাদ্রাসা মাঠের দক্ষিণ-পূর্ব পার্শ্বের ভবন নির্মাণ কাজ আরম্ভ হয়। পরবর্তীতে ইটাউরী নিবাসী আজীবনদাতা সদস্য জনাব সৈয়দ আব্দুর রাজ্জাক ও আজীবনদাতা সদস্য ডাক্তার সৈয়দ আব্দুল জলিল (সাবেক চেয়ারম্যান) তাঁদের পিতার ওয়াদা রক্ষার্থে ঐ ভবনের সুমদয় খরচ দান করেন। ফলে জনাব হাজী আকবর হোসেন ও আব্দুস শহীদের প্রেরিত অর্থগুলো উদ্ধৃত থেকে যায়। এই উদ্ধৃত অর্থ দ্বারা মাদ্রাসার দক্ষিণ পার্শ্বের সীমানা প্রচীর চিহ্নিত হয়। মাদ্রাসার মাঠের দক্ষিণ পার্শ্বের টিনসেড গৃহটি ইটাউরী নিবাসী আজীবনদাতা সদস্য জনাব সৈয়দ আব্দুল মুহিত ওরফে কয়েছ আহমদ নির্মাণ করে দেন। এ সময় মাদ্রাসার প্রচুর শিক্ষার্থীর সমাগম ঘঠতে থাকলে বিদ্যমান ভবনগুলোতে পাঠাদানের জন্য জায়গা সংকুলান হচ্ছিল না। বিষয়টি ১৯৯৫ খ্রীঃ সালে তৎকালীন সংসদ ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী জনাব এডভোকেট এবাদুর রহমান চৌধুরীর দৃষ্টিগোচর হলে তিনি সরকারী বরাদ্ধের মাধ্যমে মাদ্রাসার মাঠের পূর্ব পার্শ্বের একতলা ভবনটি নির্মাণ করে দেন। পরবর্তীতে এলাকাবাসীর আর্থিক সহযোগীতায় দ্বিতীয় তলা হয়। ক্রমেই মাদ্রাসার সুনাম বাড়তে থাকলে এলাকার বিত্তশালী ও বিভিন্ন রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গের সুনজরে আসে। তাহাদের সুবিবেচনায় প্রতিষ্ঠানের অবকাঠামো গত নানা উন্নয়ন সাধিত হয়। ২০০১ খ্রীঃ সালের বর্তমান সংসদ ও মাননীয় বন, পরিবেশ ও জলবায়ূ বিষয়ক মন্ত্রী জনাব আলহাজ্ব মোঃ শাহাব উদ্দিন এর সুবিবেচনায় সরকারী বরাদ্ধে মাদ্রাসা মাঠের উত্তর পার্শ্বের তিনতলা ভবনের একতলা নির্মিত হয়। পরবর্তীতে ২০১৫ খ্রীঃ সালের ০৭ই ফেব্রুয়ারী মাদ্রাসার প্রাক্তন ছাত্রবৃন্দের আয়োজনে প্রতিষ্ঠা লগ্ন থেকে বিদায় নেয়া ৪১ জন ছাত্রবৃন্দের সম্মানে বিদায়ী শিক্ষক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ছিলেন মাননীয় মন্ত্রী। উক্ত অনুষ্ঠানে মাদ্রাসার ভবন সম্প্রসারণে বিষয়টি দৃষ্টিগোচর করালে মাননীয় মন্ত্রী ঐভবনের দ্বিতীয় তলা করে দিবেন বলে ঘোষনা দেন। ২০১৯ খ্রীঃ সালে ০১লা জুন মাননীয় মন্ত্রী ঐভবনের উর্ধ্বমূখী ভবনের একতলার বদলে দুইতলা ভবনের ভিত্তি প্রস্থর স্থাপন করে। এলাকাবাসীর আশা পূরণ করেন। বর্তমানে ঐ ভবন উদ্বোধনের অপেক্ষায়। মাদ্রাসার প্রধান কোন ফটক ছিলো না। দৌলতপুর নিবাসী আজীবনদাতা সদস্য আব্দুস শহীদ ও তাঁর ভাই ইতালী সুহেল আহমদ নিজস্ব অর্থায়নে ফটক নির্মাণ করে দেন। কানলী ব্রীজের পূর্বাংশে গার্ডওয়াল নির্মাণের সময় প্রধান ফটক ভেংগে পড়লে বর্তমান ফটকটি নির্মাণ করে দেন মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা মাওলানা মোঃ মছদ্দর আলীর মেঝোছেলে জনাব মাহবুবুর রহমান, বর্তমান সময়ে ঐ ফটকটি মাদ্রাসার সাথে মানানসই নয়। মাদ্রাসার আঙ্গিনাটি অপেক্ষাকৃত নিচু হওয়াতে বর্ষাকালে বৃষ্টির পানি জমে গিয়ে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। মাঠে পর্যাপ্ত পরিমাণ মাটি ভরাট করে এই দূরভোগ লাঘব করেন সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও বর্তমান গভর্নিং বডির সভাপতি বীরমুক্তিযোদ্ধা জনাব মোঃ সিরাজ উদ্দিন। ১৫ই নভেম্বর ২০১৬ খ্রীঃ দৌলতপুর গ্রামের বিশ্বের ১০টি দেশে বসবাসরত প্রবাসীদের সংগঠিত সংগঠন দৌলতপুর ওয়েল ফেয়ার সোসাইটির প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে মাদ্রাসার নানা সমস্যাদি দেখে আসছে। ছাত্র/ছাত্রীদের পুরানো পরিবহনের সাথে নতুন একটি পিকআপ উপহার দিয়ে সিংহভাগ সমস্যা সমাধানে এগিয়ে এসেছে। এছাড়া ৪ ঠা মার্চ ২০১৫ খ্রীঃ সালে মাদ্রাসার সাধারণ সভায় দৌলতপুর নিবাসী মাও কমর উদ্দিন ও আমি মাদ্রাসার সাধারণ শাখা সাথে নতুন হিফজ শাখা খোলার প্রস্তাব করিলে তৎকালীন ৮ ই এপ্রিল ২০১৫ খ্রীঃ সালের গভার্নিং বডির নিয়মিত সভার ৩ নং প্রস্তাবে হিফজ শাখা খোলার অনুমোধন হয়। এরপর অনেক যাচাই বাচাই পর ৮ ই মার্চের ২০১৮ খ্রীঃ সালের গভার্নিং বডির নিয়মিত সভার ৬ নং প্রস্তাবে চুড়ান্ত অনুমোধন হওয়ার পর দৌলতপুর ওয়েলফেয়ার সোসাইটি সভাপতি, সেক্রেটারী সহ প্রবাসীদের হিফজ শাখা খোলার বিষয় সহ সহযোগিতা চাহিলে প্রবাসীরা সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন। ফলে এলাকায় বেশ সুনাম অর্জন করেছে। অধ্যক্ষ মাওলানা আব্দুল গফফার দীর্ঘ ২৭ টি বছর অধ্যক্ষ পদ থেকে ৩১ জানুয়ারী ২০১৯ খ্রীঃ সালে অবসরে যান এবং বর্তমানে উনার নিজ এলাকার একটি বেসরকারী কিন্ডার গার্ডেন একাডেমীর দায়িত্বেআছেন। মাওলানা আব্দুল গফফার সাহেব অবসরে যাওয়ার প্রাক্ষালে তাঁরই ছাত্র, সহকারী অধ্যাপক হাফিজ মওলানা লুৎফুর রহমান ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব গ্রহন করেন এবং ২৫শে মে ২০১৯ সালে সরকারী বিধিমোতাবেক অধ্যক্ষের দায়িত্বপ্রাপ্ত হন। এক বছর হতে না হতেই তিনি গত ১৬ই এপ্রিল ২০২০ খ্রীঃ পরপারে চলে যান। উনার মৃত্যু জনিত কারণে বর্তমানে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব একমাত্র সহকারী অধ্যাপক মাওলানা মোঃ মিছবাহ উদ্দিন গত ২২শে মে গ্রহন করেন। প্রত্যান্ত অঞ্চলের এই দ্বীনি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দীর্ঘদিনের পথ পরিক্রমায় অনেক চড়াই উত্তরাই পেরিয়ে ভংগুর পথ পারি দিয়ে বর্তমান অবস্থায় আসার পেছনে যাদের সহযোগীতা ছিলো, তাদের আত্ব শান্তি কামনা করি। উল্লেখ্য যে, বিভিন্ন বিষয় বিচার বিশ্লেষন করে বলতে প্রয়াস পাচ্ছি যে, পরগনাহী দৌলতপুর সিনিয়র মাদ্রাসা বর্তমানে একটি ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। তাই বর্তমানে উক্ত প্রতিষ্ঠানটি ফাজিল পর্যন্ত উন্নিত করা অতি আবশ্যক এবং জরুরী প্রয়োজন।
লেখকঃ কাজী রমিজ উদ্দিন
সাংবাদিক-বড়লেখা প্রেসক্লাব, নিকাহ রেজিষ্ট্রার, উত্তর শাহবাজপুর ইউ/পি, প্রাক্তন ছাত্র